ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫ , ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি - মাওলানা এ টি এম মা’ছুম

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০১-১১ ১৮:১৯:৪৭
আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি - মাওলানা এ টি এম মা’ছুম আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি - মাওলানা এ টি এম মা’ছুম



নিজস্ব প্রতিবেদক

৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। একটা অন্ধকার যুগ পেরিয়ে আলোর সম্ভাবনা আমরা দেখতে পাচ্ছি। অত্যাচার জুলুম নির্যাতন খুন-খারাবি লুটপাটের জঘন্যতম একটি স্বৈরাচারী অধ্যায় পেরিয়ে আমরা এদেশকে আবারো গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে অর্পণ করে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে গড়ার স্বপ্ন দেখছি। বিগত অধ্যায়টি আমাদের জন্য বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিশ্ব ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকবে। এদেশে আমরা বিগত ১৮ বছর কিভাবে ছিলাম সেটা আপনাদের আমাদের সবারই জানা আছে। 

শনিবার (১১ জানুয়ারি) নগরীর একটি অভিজাত রেস্তোরাঁর হল রুমে আয়োজিত দিনব্যাপী ইউনিট সভাপতি সম্মেলেনে এসব কথা বলেন।

ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা কামরুল আহসান এমরুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানান এ.টি.এম মা'ছুম বলেন, আমরা দেড় হাজার বছর পূর্বে আইয়ামে জাহেলিয়াত সম্বন্ধে জানি। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের চিত্র যদি আমরা আমাদের সামনে রাখি তাহলে গত ১৮ বছরের আওয়ামী লীগের জাহিলিয়াত তার চেয়েও জঘন্য। আইয়ামে জাহেলিয়াতেও মানুষ মেরে লাশের উপরে নৃত্য করা হয়নি। আওয়ামী জাহিলিয়াতের যুগে এই ধরনের জঘন্যতম পৈশাচিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। আমরা উভয় দিক থেকেই একটা সংকটের মধ্যে বিগত আঠারো বছর কাটিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দেশকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে জঘন্যতম একটি কালো ইতিহাস হিসেবে থাকবে। মানুষের ভোটাধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে। সভা সমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শ্রমিক মজুরের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষের জীবনের শান্তি-স্বস্তি নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। আওয়ামী স্বৈরাচারের কবলে পড়ে দেশের বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। শ্রমিক কৃষক মজুর সর্বত্রই মানুষের মধ্যে আমরা একটা হাহাকার দেখতে পেয়েছি। হত্যা সন্ত্রাস গুম হামলা-মামলা অন্যায় জুলুম পাপাচার লুটপাট মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতিতে গোটা দেশ ছেয়ে গিয়েছিল। তারা দেশের অর্থ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্যাংক লুটে খালি করে দিয়ে কোটি কোটি ডলার পাচার করে বিদেশে বেগমপাড়া তৈরি করেছে। 

মাওলানান এ.টি.এম মা'ছুম বলেন, ৯২ ভাগ মুসলমানের এই বাংলাদেশে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, মুসলিম জাতিসত্তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে। যে দলটি ক্ষমতার মসনদে ছিল আসলে তারা জন্মগতভাবে ইসলামবিদ্বেষী ছিল। তাদের নেতা ভাসানী এই দলটির নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ রেখেছিল। ইসলামবিদ্বেষ তাদের মগজে এত পরিমাণ ছিল যে তারা মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ রেখেছে। একাত্তরে তারা ক্ষমতায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে কুরআনের আয়াত বাদ দিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মনোগ্রাম থেকে কুরআনের আয়াত তারা বাদ দিয়েছে। পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে ইসলামী ইন্টারমিডিয়েট নামে একটি কলেজ ছিল। ইসলাম থাকার কারণে কলেজের নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয়। নাম রাখা হয় কবি নজরুল ইসলাম কলেজ। এখানেও কবি নজরুল ইসলামের নাম খন্ডিত করে ইসলাম বাদ দিয়ে রাখা হয় কবি নজরুল কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের নাম ছিল সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। এখান থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে সলিমুল্লাহ হল রাখা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নাম রাখা হয়। 

তারা ক্ষমতায় এসে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা এদেশের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল। সেটি আরো জঘন্যতম রূপ ধারণ করে বাংলাদেশের প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহর নবী বলেছেন তোমাদের সন্তানরা যদি সাত বছর পরে তাহলে তাদেরকে নামাজের তাগিদ দাও। আর শেখ হাসিনা সর্বশেষ যে শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন করেছিল সে শিক্ষা নীতিতে বলেছে যে, ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ছেলেদেরকে ইসলামী শিক্ষা দেয়া যাবে না। অন্যদিকে তারা স্কুলের সিলেবাসে যৌনশিক্ষা যুক্ত করে। তার মানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যিনা ব্যাভিচারের শিক্ষা দেয়ার আয়োজন তারা করেছিল। যেসব বই পুস্তকে মুসলিম কবি সাহিত্যিকদের কবিতা সাহিত্য ছিল এগুলো তারা বাদ দিয়ে অন্য ধর্মের লেখকদের গল্প কবিতা বাস্তবায়ন করেছে। হাসিনার পতনের কিছুদিন আগেও স্কুলের ইসলাম শিক্ষা বইয়ের কাভারে দুর্গা দেবীর ছবি দেয়া ছিল। কী পরিমাণ উপহাস তারা ইসলামের বিরুদ্ধে করেছে এর থেকে বোঝা যায়।

মাওলানান এ.টি.এম মা'ছুম আরও বলেন, কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মদপানকে হারাম করেছেন। আর শেখ হাসিনা মদকে বৈধতা দিয়েছেন। হাটে বাজারে বিভিন্ন জায়গায় মদের ছাড়াছড়ি। আমাদের ছেলেমেয়েরা উঠতি বয়সে মদের নেশায় তারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যারা এ দেশের ভালো চায়না তারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নষ্ট করতে চায়। দেশের স্বাধীনতা চায় না, যারা আমাদের দেশের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায় তারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নষ্ট করে দিতে চায়। যারা এদেশকে প্রতিবেশী রাজ্যের অঙ্গরাজ্য বানিয়ে দিতে চায় তারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সূচনা লগ্নেই নেশা ধরিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন আল্লাহর রাসূলের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে নাস্তিকদের দিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করিয়েছে। মাদ্রাসাগুলোকে তারা জঙ্গি তৈরির কারখানা বলেছে। শাপলা চত্বরে তারা নিরীহ আলেম-ওলামাদেরকে যেভাবে হত্যা করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে হিটলারকেও হার মানায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত সম্ভাবনাময় ইসলামী আন্দোলন ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’কে তারা সবচেয়ে বেশি জুলুম নির্যাতনের শিকারে পরিণত করেছিল।

মাওলানান এ.টি.এম মা'ছুম বলেন, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী সহ অগণিত নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামালা দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে তারা হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন তারা বাতিল করেছে। কী অপরাধে বাতিল করেছে? হাসিনার নির্বাচন কমিশন বলেছিল জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ওই ধারাটা বাতিল করতে হবে যে ধারাতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ক্ষমতার কথা লিখা। আমরা বলেছিলাম এটা আমাদের ঈমানের অংশ। আমরা এটা পরিবর্তন করতে পারব না। এরপর তারা আমাদের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হয়। 

স্বৈরাচারী সরকার পতনের আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের শাহাদাত কবুলের জন্য আমরা দোয়া করছি। আর যারা আহত হয়েছেন তাদের সুস্থতার জন্যও আমরা দোয়া করছি। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। আন্দোলন করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী। এই পনেরো বছরে যত বৈষম্য ছিল, জুলুম ছিল, যত নির্যাতন ছিল, যত শোষণ ছিল, যত বঞ্ছনা ছিল এগুলো দূর করে বাংলাদেশটাকে একটি বসবাসের উপযোগী শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব এখন আমাদের কাঁধে। সেই দায়িত্বকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ময়মনসিংহ জেলা আমীর মো. আব্দুল করিম, ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর আসাদুজ্জামান সোহেল প্রমুখ। 

এছাড়াও ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আনোয়ার হাসান সুজন, মাহবুবুল হাসান শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আল হেলাল তালুকদার, অর্থ সম্পাদক গোলাম মহসীন খান, শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য সহ বিভন্ন সাংগঠনিক থানা শাখার দায়িত্বশীলবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ